অস্থি বা হাড় সম্পর্কিত ধারনা
শরীরের সুস্থতার জন্য হাড়কে সারা জীবন সুস্থ রাখার প্রয়োজন রয়েছে। সুস্থ হাড় মানে শক্ত পরিকাঠামো, সচলতা এবং আঘাত থেকে সুরক্ষা। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সহায়তাকারী পদার্থ ক্যালসিয়ামের সঞ্চয়স্থল হল হাড়।
কিন্তু প্রশ্ন হল হাড়ের কি সারা জীবন ধরে তৈরি এবং ক্ষয় হয়? পূর্ণবয়সে প্রতি ৭-১০ বছর অন্তর গোটা কঙ্কালটারই পরিবর্তন হয়।
তাই সুস্থ হাড়ের সঠিক দেখভালের জন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ এবং ব্যায়ামের প্রয়োজন। হাড় সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক ধারণার কথা জানানো হচ্ছে এবং তা দেখভালের জন্য কী ধরনের আহার ও ব্যায়াম দরকার তা বলা হচ্ছে।
হাড় কঙ্কালের গুরুত্বপূর্ণ অংশের জীবন্ত কোষসমূহের সমাহার। এক জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে ২০৬টি হাড় থাকে। অন্য দিকে একটি শিশুর দেহে থাকে ৩০০ হাড়। এরা শরীরকে সচল রাখতে এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
হাড়ের গঠন
হাড় প্রোটিন এবং খনিজ পদার্থ ক্যালসিয়াম, ফসফেট ও ম্যাগনেসিয়াম দিয়ে তৈরি। কোলাজেন (এক ধরনের প্রোটিন) সিমেন্টের কাজ করে কাঠামো তৈরি করে।
হাড়ের মূল কাঠামোর উপাদান
পেরিওসটিয়াম– হাড়ের বাইরের অংশে এই পাতলা ঝিল্লি স্নায়ু এবং ধমনী নিয়ে গঠিত। এতে নার্ভ ও শিরাধমনী থাকে।
কমপ্যাক্ট বোন– এটি হাড়ের বাইরের অংশ, যেটি দেখা যায়।
ক্যানসেলুয়াস বোন–এটি দেখতে ঠিক স্পঞ্জের মতো, কমপ্যাক্ট হাড়ের মতো শক্ত নয়। এটি হাড়ের ভেতর মজ্জাকে ঢেকে রাখে।
হাড়ের বৃদ্ধি
হাড়ের নিয়মিত ক্ষয় এবং নতুন হাড়ের গঠন চলছে যাকে হাড়ের বিপাকক্রিয়া বলে। এ কাজে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ কোষ জড়িত
অসটেওব্লাসটস–এই কোষ নতুন হাড় গঠন করে।
অসটেওক্লাসটস–এই কোষটি হাড়ের নিয়মিত ক্ষয়ের জন্য দায়ী।
এই দু’টি কোষের যৌথক্রিয়ায় শরীর তার প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ পায়। সারা জীবন এই কাজ চলে।
হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য কী আহার করা উচিত
পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম গ্রহণ হাড়কে সুস্থ রাখে। শরীরের ৯৯ শতাংশ ক্যালসিয়াম হাড়ে জমা থাকে। এ ছাড়া হাড় সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন- কে। দুধ জাতীয় খাদ্য থেকে যথেষ্ঠ পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। আবার খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন-ডি’র প্রয়োজন। সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন-ডি ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। মাছ জাতীয় খাদ্য থেকেও ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়।
যে কারণগুলি হাড়ের স্বাস্থ্য উপর প্রভাব ফেলে
জিনগত কারণ: বাবা-মা বা পরিবারে কারও হাড়ের সমস্যা থাকলে সন্তানেরও সেই সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারও জিনগত ভাবে শক্ত হাড় হয় কারও আবার এই কারণে হাড় দুর্বল হয়।
খাওয়া-দাওয়া: মজবুত হাড়ের জন্য শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি প্রয়োজন। অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপান হাড়ের ক্ষয় বাড়িয়ে দেয়।
সচলতা: নিয়মিত ব্যায়াম এবং শারীরিক কাজকর্ম হাড় শক্ত করে।
বয়স: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষয়ও বাড়তে থাকে। মেনোপোজের পর হাড়ের সমস্যা বাড়ে।
শরীর গঠন: রোগা এবং বয়স ও উচ্চতার তুলনায় কম ওজন হাড়ের সমস্যার অন্যতম কারণ।
অস্টিওপোরোসিস
শরীর থেকে খনিজ পদার্থ প্রধানত ক্যালসিয়াম অতিরিক্ত ক্ষয় হলে অস্টিওপোরোসিস হয়। সাধারণ মহিলাদের ক্ষেত্রেই এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তবে অল্প হলেও পুরুষদের অস্টিওপোরোসিস হয়।
মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপোজের পরে এই সমস্যা দেখা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে এর আগেই অস্টিওপোরোসিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা হাড়ে খনিজ ঘনত্বের (বিএমডি) পরিমাণ নির্ণয় করে এ নিয়ে পরামর্শ দেন। প্রথম অবস্থায় এর লক্ষণ বোঝা না গেলেও হাড় ভাঙলে বা চিড় খেলে অস্টিওপোরোসিস হয়েছে বোঝা যায়।
অস্টিওপোরোসিসের প্রতিরোধ
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ক্যালসিয়ামযুক্ত খাওয়া-দাওয়া অস্টিওপোরোসিসকে অনেকটাই প্রতিরোধ করতে পারে। এ ছাড়া যে বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ
হরমোন: ইস্ট্রোজেন হরমোনের স্বাভাবিক উৎপাদন হাড়কে সুস্থ রাখে। নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোন কম উৎপাদিত হয়
মাসিক না হাওয়া
মাসিকচক্রের গণ্ডগোল
প্রথম মাসিক শুরু হতে দেরি
সময়ের আগেই মেনোপোজ
জীবনযাপন
ধূমপান মহিলাদের ক্ষেত্রে অস্টিওপোরোসিসের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। এই রোগের ওষুধ চলাকালীন ধূমপান করলে ওষুধ কার্যকর হয় না। এ ছাড়া অতিরিক্ত মদ্যপান অস্টিওপোরোসিসের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া অন্য যে কারণ রয়েছে
পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ না করা
নিয়মিত শারীরিক কাজকর্ম না করা
অতিরিক্ত কফিজাতীয় পানীয়গ্রহণ
অতিরিক্ত মদ্যপান
হাড়ের জন্য ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। তবে নিজের ইচ্ছেমতো ব্যায়াম না করে শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে নানা রকম পরিবর্তন হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো হল :
হাড়ের ভর ও ঘনত্ব কমে
মাসলের আকার ও শক্তি কমে
টেন্ডন আর লিগামেন্টের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়
কার্টিলেজের ক্ষয় হয়, গাঁট ফোলে ও ব্যথা হয়।
এর ফলে হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিভিন্ন ধরনের আঘাত পাওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়। হতে পারে অস্টিওপোরোসিস আর আর্থরাইটিস। নিয়মিত ব্যায়াম করলে এ ধরনের জটিলতা এড়ানো যায়। কিছু ক্রনিক সমস্যায় আরাম পাওয়া যায়। নিয়মিত ব্যায়ামে হাড়ের ক্ষতি এড়ানো যায়, মাসলের শক্তি, সমন্বয় ও ভারসাম্য বজায় রাখা যায়। ফলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না এবং স্বভাবতই হাড় ভাঙারও ভয় থাকে না। তবে ব্যায়াম শুরু করার আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। নিজের ইচ্ছামতো ব্যায়াম করবেন না। কারণ আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য কেমন, তার উপর নির্ভর করবে আপনার ব্যায়া এবং সেটা ডাক্তারই ঠিক করা দেবেন।